মাঠ পুলিশে কাজে গতি ফেরাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজারের নবাগত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ। তার আলোকে কক্সবাজারের নয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পৃথক আদেশে অন্যত্রে বদলি করে একদিনে ৬টি থানায় নতুন ওসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা ডিএসবিতে নতুন ওসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানা গেছে।
নতুন নিয়োগ পাওয়া ওসিরা হলেন- রামু থানায় ইমন কান্তি চৌধুরী, কুতুবদিয়া থানায় মো. আরমান হোসাইন, টেকনাফ থানায় মো. গিয়াস উদ্দিন, উখিয়া থানায় মো. আরিফ হোসাইন, ঈগাঁও থানার নতুন ওসি মো. মছিউর রহমান, পেকুয়া থানা মো. সিরাজুল মোস্তফা, ডিএসবিতে নিয়োগ পেয়েছেন মো. মিজানুর রহমান।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট এ সরকার পতনের পর সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েন। আমি যোগদানের পর থেকে জেলা পুলিশের মনোবল ফেরাতে নানা দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছি। তার আলোকে মাঠে পুলিশ নতুন করে কাজ শুরু করেছে।
নতুন ওসি পদায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোন তদবির ছাড়াই ছয় ওসিকে পদায়ন করা হয়েছে। যেইসব ওসিদের পদায়ন করা হয়েছে স্ব স্ব এলাকা থেকে তাদের ভেরিফিকেশন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তার আলোকে তাদের পদায়ন করা হয়েছে। অন্য তিন থানায়ও সহসাই ওসি পদায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
গতকাল যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র, অতিরিক্ত পুলিশ (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নতুন পুলিশ সুপারের নির্দেশে কক্সবাজারের ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াও সব থানা, ফাঁড়িতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী কয়েকদিন মধ্যে পুরোদমে কক্সবাজারবাসী সেবা পাবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আপনারা সবাই অবগত আছেন যে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতনের পর থেকে কক্সবাজারে নির্যাতিত জন মানুষের ক্ষোভে পুলিশের অনেক স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর চালায়। এতে কক্সবাজারের তিনটি থানা ও ট্রাফিক অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ওই সময় জেলা ট্রাফিক বিভাগসহ তিনটি থানায় ১ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং পুলিশের ৯ টি যানবাহন ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারের পুলিশের স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা পুলিশ হেডকোয়ার্টারের প্রেরন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ গত রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের নতুন পুলিশ সুপার হিসেবে মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বিদায়ী পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলামের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। পরে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সামগ্রিক বিষয়ে মতবিনিময় করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। এর আগে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ তার কার্যালয়ে পৌঁছালে কক্সবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় এবং জেলা পুলিশ তাকে অভ্যর্থনা জানান।
নবাগত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ এর আগে হাইওয়ে পুলিশ ময়মনসিংহ রিজিয়নে পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা জেলার বাসিন্দা। ১৯৯৪ সালে ঢাকা আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি এসএসসি এবং ১৯৯৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে অনার্স ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। নতুন এসপি মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ ২০০৬ সালের ২১শে আগস্ট ২৫তম বিসিএস এর মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার পদে বাংলাদেশ পুলিশের চাকুরীতে যোগদান করেন। বাংলাদেশ পুলিশের এই কর্মকর্তা ২০১৩ সালের ৬ই মার্চ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে এবং ২০১৮ সালের ৭ই নভেম্বর পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। চাকুরী জীবনে তিনি সার্কেল এএসপি হিসেবে বরগুনা জেলা, কিশোরগঞ্জ জেলা, মৌলভীবাজার জেলা, সিনিয়র সহকারী পরিচালক হিসাবে রাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে হবিগঞ্জ জেলা, এসএমপি, সিলেট ও হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়ন ও সর্বশেষ ময়মনসিংহ রিজিয়নে পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া পুলিশ সুপার (অপারেশন ও স্পেশাল এ্যাফেয়ার্স) হিসেবে হাইওয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকায় চাকুরী করেছেন তিনি।
পাঠকের মতামত